শীতের রোদে বসে ভাবনা এলো-
বহু আগের শীতকালে, আমাদের কৈশোরে দেখেছি ভাত খাওয়ার শুরুতে দুই তিন লোকমা/গ্রাস ভাত সরিষা তেল, পিঁয়াজ কুচি/ঝাঁঝপূর্ণ লাল মুলোর টুকরো দিয়ে মেখে খাওয়ার রেওয়াজ ছিল। বহু যুগের অভিজ্ঞতা হতে মুরুব্বীরা দাবী করতেন- এতে মুখের স্বাদ/খাওয়ার রুচি বাড়ে এবং সর্দি/কাশি লাগে না। আমরা অভিজ্ঞতার পরিবর্তে অনুকরণকে প্রাধান্য দিয়ে এসব বর্জন করে আধুনিক হলাম, এবং আধুনিকতার দেমাগে (ইচ্ছে করেই অহঙ্কার শব্দটা ব্যবহার করলাম না) ভুলে গেলাম যে পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণ হতে স্থানীয় পরিবেশ ও প্রকৃতি, অভ্যাস, সংস্কৃতিজাত সঞ্চিত বহু যুগের অভিজ্ঞতা উত্তম।
দুই দশক আগে, যেসব মুরুব্বীরা জীবিত ছিলেন, তাদের চাহিদা বা অভ্যাসজনিত কারণেই ঘরে ঘরে লেবুর আচারসহ বিভিন্ন আচার কাচের বোয়ামে বানিয়ে রাখা হত। আমের মোরব্বাও থাকতো। তবে লেবুর আচার আর আমের মোরব্বার বিশেষ মূল্য ছিলো, অসুস্থ বা যাদের ক্ষুধা কম ছিলো তাদের ভাতের সাথে সামান্য লেবুর আচার দেওয়া হত, হাতে হাতে ফলাফল।
ডাক্তার বললেন, “রোজ সকালে বিশ/ত্রিশ মিনিট রোদে বসবেন, শরীরে রোদ লাগাবেন।” উপদেশ শুনে মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠতেই ডাক্তার প্রশ্ন করলেন, “হাসির কি হলো?” বিনয়ের সাথে তাকে বললাম, “না, হাসির কিছু হয় নাই। ছোটবেলা থেকে যৌবনের প্রথমভাগ পর্যন্ত সকালে ঘুম থেকে জেগে রোদে বসা, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার জন্য মুরুব্বীদের প্রবল চাপ ছিলো, তারা ভিটামিন ‘ডি’ও চিনতেন না ‘মর্নিং ওয়াক’ কাকে বলে তাও জানতেন না।
করোনা মহামারীর দিনগুলোতে সবাই রোগের নিদান খুঁজছেন। শরীরের ইম্যুনিটি বাড়ানোর জন্য প্রিয় একজন প্রকৌশলী বন্ধু নিজ গরজে ঐতিহ্যবাহী/প্রাচীন ভেষজ ফুড সাপ্লিমেন্ট ‘চ্যাবনপ্রাশ’ বানালেন। হোমমেড চ্যাবনপ্রাশ কাছাকাছি যারা নিলেন তারা একবাক্যে এর উপকারিতা স্বীকার করলেন। কিন্তু বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া গেলো না। কারণ, আধুনিক আমরা অমিতাভ বচ্চনের বিজ্ঞাপন করা ‘চ্যাবনপ্রাস’ বা জেমসবন্ড হিরো পিয়ার্স ব্রসনানের বিজ্ঞাপন করা ‘পান মাসালা’ মেনে নিতে পারি, কিন্তু ঘরে বানানো চ্যাবনপ্রাশ মেনে নিতে গেলে কি আর আধুনিকতা রক্ষা হয়!
loading...
loading...
আধুনিক আমরা অমিতাভ বচ্চনের বিজ্ঞাপন করা ‘চ্যাবনপ্রাস’ বা জেমসবন্ড হিরো পিয়ার্স ব্রসনানের বিজ্ঞাপন করা ‘পান মাসালা’ মেনে নিতে পারি, কিন্তু ঘরে বানানো চ্যাবনপ্রাশ মেনে নিতে গেলে কি আর আধুনিকতা রক্ষা হয়!
loading...